পুঁজিবাজারে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী বাড়ানোর লক্ষে দেশের মানুষকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধরাবাহিকতায় মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা (পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কাজ করছে কমিশন। শিগগিরই এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠাবে বিএসইসি। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন পাঠ্যপুস্তক অন্তর্ভুক্ত করতে বর্তমান সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। সেখানে শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করার কার্যক্রম চলছে। আগামী ২০২২ সাল থেকে নতুন এ পাঠ্যপুস্তক চালু করা হবে। যেসব পাঠ্যপুস্তক চালু করতে যাচ্ছে, তাতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দশটি বিষয় অধ্যয়ন করনো হবে। বিষয়গুলো- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, জীবন ও জীবিকা, পরিবেশ ও জলবায়ু, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে পাঠ্যপুস্তকে ওই ১০টি বিষয়ের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ক কিছুই নেই। তাই মাধ্যমিক স্তরের পঠ্যপুস্তকে
বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এদিকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের প্রসারে কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করছেন। তাদের মতে, বর্তমানে যেসব বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে রয়েছেন কেবল তাদের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমটি সীমিত রাখা উচিত। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও বাস্তবসম্মত নয়। দেশের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে পুঁজিবাজারকে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।
তবে বিএসইসি বলছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি স্কুল কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করাই শ্রেয়। স্কুল পর্যায়ের বিনিয়োগ শিক্ষা, একজন নাগরিককে পরিণত বয়সে আয়, ব্যয়, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাই দেশে জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিশেষ ধরনের ‘ই-লার্নিং প্লাটফম’ গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এরই ধরাবাহিকতায় প্রাথমিক পর্যায় থেকে সচেতনতা বাড়াতে মাধ্যমিক থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা তুলে ধরা হবে। পরবর্তীতে কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সর্বপরি বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে মাস্টার্স বিভাগ চালু করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। শিগগিরই এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একপি প্রস্তাব পাঠানো হবে। পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে জনগণকে শিক্ষিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা উদ্যোক্তা এবং উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে চাই। দেশের জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে মিল রেখেই আমরা এ বিষয়ে কাজ করব।’
বিএসইসির মতে, দেশের পুঁজিবাজারে অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। আরা তারা যথাযথ বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যাদি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না। তাই তারা গুজব, ধারণা এবং আবেগের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে বাজারে তথ্যের অসামজ্ঞস্যতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করে থাকে। এর ফলে বাজার কারসাজির সম্ভাবনা বহুগুল বেড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাজারে ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘটনা ঘটে থাকে। এতে করে পুঁজিবাজারের তথ্য অসামঞ্জস্যতা হ্রাস পাচ্ছে।
তাই বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলে, পুঁজিবাজারে তথ্য অসামঞ্জস্যতা হ্রাস পাবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সামর্থ্য হবে। এতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল এবং দক্ষ হবে। বাজার কারসাজির সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। এরই ধরাবাহিকতায় বিএসইসি ২০১২ সালে একটি ১০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যেখানে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটিকে ফলপ্রসু করার জন্য স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করার কথা বলা হয়েছে। তাই জাতীয় পাঠ্যক্রমে আর্থিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি।
বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটের (বিএএসএম) মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ফাইন্যান্সিয়াল এডুকেশন নিয়ে বর্তমান কমিশন অফিশিয়াল এবং ননঅফিশিয়াল ভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসির যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, তার মূল কার্যক্রম হচ্ছে ফাইন্যান্সিয়াল এডুকেশন। এর জন্য যেসব কার্যক্রম ও পরিকল্পনাগুলো নেওয়া হচ্ছে সেগুলো সবকিছুই ফাইন্যান্সিয়াল এডুকেশনের অন্তর্ভুক্ত।