1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২ পূর্বাহ্ন

পিকে হালদারের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে বাঁচতে চায় পিএফআই!

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১
  • ৩১১ বার দেখা হয়েছে
pk halder

কয়েক বছর ধরে অর্থনীতিতে একটি আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। দেশত্যাগ করে এখন তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই সুযোগে দেশের কিছু ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন, হয়ে পড়েছেন ইচ্ছাকৃত খেলাপি। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ঋণ পরিশোধ না করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (পিএফআই) সিকিউরিটিজ লিমিটেড অন্যতম।

তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শীর্ষ ১০০ খেলাপির কাছে বর্তমানে মোট পাওনার পরিমাণ এক হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে পিএফআই সিকিউরিটিজের দায় মোট ৮১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৮১ টাকা। সুদে-আসলে এর পরিমাণ ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন থেকেই খেলাপির তালিকায় রয়েছে পিএফআই। পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের ধারাবাহিকতা মোটেও ভালো নয় প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়া একই গ্রুপভুক্ত অপর প্রতিষ্ঠান প্রাইম সোর্সিং লিমিটেডের কাছে পাওনা রয়েছে আট কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যার পুরোটাই মন্দমানের খেলাপি ঋণ। দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই টাকা আদায় করতে না পেরে মামলা করে রেখেছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির মোট আমানত দুই হাজার ৭৫১ কোটি। মোট ঋণ তিন হাজার ৮৭৭ কোটি। এর মধ্যে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৫০১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৯০ দশমিক ৩১ শতাংশ। মোট খেলাপির মধ্যে পিকে হালদার নিয়ে গেছেন এক হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। বাকি দুই হাজার ২৮১ কোটি টাকার খেলাপি গ্রাহক এখনও দেশেই রয়েছেন, করছেন সুযোগের সদ্ব্যবহার। দেউলিয়া ঘোষণা হলে যেন পরিত্রাণ পেয়ে যাবেন তারা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এখন আমাদের প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। ফলে কেউ টাকা জমাও দিতে পারবেন না, আবার উত্তোলনও করতে পারবেন না। অনেক ভালো গ্রাহক আছেন যারা টাকা ফেরত দিতে চান, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা টাকা দিতে পারছেন না। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সব গ্রাহকই খারাপ নন। অনেক গ্রাহক ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য চেক জমা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আমরা টাকাগুলো আদায় করতে পারছি না। এছাড়া যেসব গ্রাহকের ব্যবসা এখন ভালো চলছে তারাও টাকা ফেরত দিতে চান, কিন্তু পারছেন না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পিএফআই সিকিউরিটিজ ছাড়াও শীর্ষ ১০০ খেলাপির মধ্যে রয়েছে বর্ণালী ফেব্রিক্স লিমিটেড, বেনিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফারুক অ্যান্ড সন্স লিমিটেড, রহমান শিপ ব্রেকারস লিমিটেড, এমএম শিপ ব্রেকিং লিমিটেড, রেডিও ব্রডকাস্টিং এফএম (বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেড, বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড ও ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেড। তাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কিস্তি দেয় না বলে দাবি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের।

প্রসঙ্গত, আদালতে সম্প্রতি দাখিল করা বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগী ৪৩টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব এরই মধ্যে ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালে নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে দুই হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। আত্মসাৎ করা অর্থ বিতরণ করা ঋণের ৬৭ দশমিক ৯১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সার্বিক পর্যালোচনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার, ক্রেডিট ডিভিশন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা ৮৩ ব্যক্তির ঋণের আড়ালে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ দুর্নীতি ও জালিয়াতি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নিজ আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে যান পিকে হালদার। কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। অর্থ পাচার নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে দুদক ও বিএফআইইউ।

২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি আইএলএফএসএলের চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটির ব্যালেন্সশিট পর্যালোচনা করেন ইব্রাহিম খালেদ। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ৪৩ দিনের মাথায় প্রতিষ্ঠানাটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন ইব্রাহিম খালেদ। লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকার কারণেই ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন মরহুম ওই বিজ্ঞ ব্যাংকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখনও মানুষের টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে সব পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন, বিশেষ করে বিচারিক সহযোগিতা। হিসাব জব্দের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে আরও বেশি সিলেক্টিভ হওয়া প্রয়োজন ছিল। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়ার কারণে অনেকেই টাকা দিতে পারছেন না। আবার পুনঃতফসিলের টাকাগুলো সমন্বয় করতে পারছি না।

পিকে হালদারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা উচিত। তিনি যত টাকা আত্মসাৎ করেছেন, সেই টাকাও আদায় করা সম্ভব। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে তিনি ঋণগুলো নিয়েছেন, সেগুলো থেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব টাকা আদায় করা সম্ভব।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য পিএফআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ফরিদুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্যস্ততার কথা বলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। এরপর দুই দিন ফোন রিসিভ করেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটস অ্যাপে পাঠানো প্রশ্ন দেখেও (সিন করে) দেননি কোনো উত্তর। পরে এমডির কার্যালয়ে সরাসরি সাক্ষাতে তিনি জানান, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সঙ্গে টপ লেভেলে আলোচনা চলছে। ঋণগুলো পুনঃতফসিল করা হতে পারে। খুব দ্রুতই এই কাজ শেষ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। সূত্র: শেয়ারবিজ

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ