প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্সে ২৫ হাজার ৩৮৯ জন আবেদনকারীকের জরিমানা গুণতে হবে। তারা শেয়ারতো পাবেনই না, উল্টো প্রতি আবেদনে গুণতে হবে ১৫ শতাংশ জরিমানা।
আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংক হিসাব দিয়ে একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে খুলতে পারে। তবে আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে দুটির বেশি করা যাবে না। কিন্তু সোনালী লাইফের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার ৩৮৯টি আবেদন জমা পড়েছে বিধিবহির্ভূত ভাবে। যার মাধ্যমে তিন কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার শেয়ারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। টাকার হিসেবে আবেদন ছিলো ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আইন অনুযায়ী এর ১৫ শতাংশ জরিমানায় বাজেয়াপ্ত হবে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার টাকা।
বিধি অনুযায়ী এই টাকা প্রথম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কেটে রাখবে। পরে তা কোম্পানিতে জমা দিবে। কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিবে। বিএসইসি তার একটি হিসাবে টাকা রাখবে। কোন কারণে কেউ দাবি করলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বিএসইসি।
আবেদনকারীদের বেশির ভাগ সরকারি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। তবে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেরও আছে। পরিমাণে তাদের একটু কম। তবে জরিমানা মওকুফের জন্য বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)’র পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে বিএমবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন বলেন, প্রথম হওয়ার ফলে না বুঝে কিছু ভুল হয়েছে। আমরা জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করেছি। একই সাথে আমার জানা মতে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আইন অনুযায়ী প্রথমে ডিএসই আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করবে। পরে যোগ্য আবেদনগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দিবে। অন্যদিকে অযোগ্য আবেদনগুলো প্রথমে বাতিল বলে গণ্য হবে। পরে প্রত্যেকটি আবেদনের বিপরীতে ১৫ শতাংশ করে জরিমানা করা হবে।
তিনি বলেন, জারিমানার টাকা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কেটে রাখবে। পরে তা কোম্পানিতে জমা দিবে। কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিবে। বিএসইসি তার একটি হিসাবে টাকা রাখবে। কোন কারণে কেউ দাবী করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র মতে, ১০ হাজার টাকার আবেদনের বিপরীতে ১৭টি বা ১৭০ টাকার শেয়ার পাবেন। একইভাবে প্রবাসী (এনআরবি) বিনিয়োগকারীরা ৩৩টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ২২টি করে শেয়ার পাবেন।
যেসব দেশীয় সাধারণ বিনিয়োগকারী আইপিওতে ২০ হাজার টাকা আবেদন করেছেন তাদের ৩৪টি শেয়ার, যারা ৩০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৫১টি, যারা ৪০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৬৮টি এবং যারা ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৮৫টি শেয়ার দেয়া হয়েছে।
একইভাবে যেসব প্রবাসী বিনিয়োগকারী আইপিওতে ২০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৬৬টি শেয়ার, যারা ৩০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৯৯টি, যারা ৪০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ১৩২টি এবং যারা ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ১৬৫টি শেয়ার দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে যেসব ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী আইপিওতে ২০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৪৪টি শেয়ার, যারা ৩০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৬৬টি, যারা ৪০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ৮৮টি এবং যারা ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তাদের ১১০টি শেয়ার দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সোনালী লাইফের আইপিওতে ৩৬ দশমিক ৪৫ গুণ বেশি আবেদন পড়েছে। আইপিওতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার পেতে মোট তিন লাখ ৬৭ হাজার ২৫০ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৩৮৯টি আবেদন বাতিল হয়েছে। সে হিসাবে বৈধ আবেদনকারী তিন লাখ ৪১ হাজার ৮৬১টি।
এসব বৈধ বিনিয়োগকারীরা ৬৯ কোটি ২৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০টি শেয়ারের জন্য মোট ৬৯২ কোটি ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকার আবেদন করেছেন। এর মধ্যে দুই লাখ ৭৩ হাজার ৩৬ জন সাধারণ বিনিয়োগকারী ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ ৮৬ হাজারটি শেয়ারের জন্য ৪৪৩ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কোটায় ৪৯ হাজার ৯৯২ জন বিনিয়োগকারী আট কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজারটি শেয়ারের জন্য ৮৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার আবেদন করেন। প্রবাসী (এনআরবি) কোটায় আবেদন করেন ১৮ হাজার ১২২ জন। এসব বিনিয়োগকারীরা পাঁচ কোটি ৬৬ লাখ ৭৮ হাজারটি শেয়ারের জন্য ৫৬ কোটি ৬৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার আবেদন করেন।